১৫ আগস্টে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পটভূমি কী ছিল? বাকশাল, রক্ষীবাহিনী, দুর্নীতি ও দুর্ভিক্ষের ফলে সৃষ্ট সমালোচনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ।

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবুর রহমান-কে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ বা আনুষ্ঠানিক দণ্ড ছিল না। তবে, তাঁর শাসনামলে নেওয়া কিছু বিতর্কিত নীতি ও পদক্ষেপ জনমানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল, যা সামরিক অভ্যুত্থানের পথকে সুগম করতে সহায়তা করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদদের মতে, তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ফলস্বরূপ সৃষ্ট সমালোচনার মূল ক্ষেত্রগুলো নিম্নরূপ:

১. একদলীয় শাসন প্রবর্তন (বাকশাল)

  • পদক্ষেপ: ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

  • ফলাফল: সমালোচকদের দৃষ্টিতে, এটি ছিল গণতন্ত্রের পরিপন্থী একটি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি এবং সংবাদপত্রকে জাতীয়করণ করার ফলে মৌলিক রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব হয় এবং ব্যাপক রাজনৈতিক হতাশা সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন: 'মাস্টারমাইন্ড' শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ড: ট্রাইব্যুনালের রায়

২. অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও দুর্ভিক্ষ

  • পরিস্থিতি: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সম্পদের তীব্র অভাব ও দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাঝে ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আঘাত হানে।

  • ফলাফল:

    • অদক্ষতা ও দুর্নীতি: সরকারের অদক্ষতা ও জাতীয়করণকৃত শিল্প এবং ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছিল।

    • পারিবারিক বিলাসিতা: চরম অর্থনৈতিক সংকটের সময়েও, শেখ মুজিব-এর পরিবারের সদস্যদের অতিরিক্ত বিলাসিতা এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহারের গুঞ্জনগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা জন্ম দেয়।

৩. রক্ষীবাহিনী গঠন ও তার বিতর্কিত ব্যবহার

  • পদক্ষেপ: অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং সশস্ত্র বামপন্থী বিদ্রোহ দমনে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়।

  • ফলাফল: রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ ওঠে। এই বাহিনী তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ভীতি ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।

৪. রাজনৈতিক বিভেদ ও অসন্তোষ বৃদ্ধি

  • অবস্থা: বাকশাল প্রবর্তনের পর ক্ষমতার অতি কেন্দ্রীকরণ এবং কিছু নেতার আচরণে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও তীব্র অসন্তুষ্টি ছিল।

  • ফলাফল: এই অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং বাহ্যিক অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাষী অংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে। এই ক্ষুব্ধ অংশটিই ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়।

এই সমস্ত বিষয়গুলো ছিল মূলত রাজনৈতিক ও নীতিগত সমালোচনা যা তাঁর শাসনামলের ফলাফল হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তাই  যদিও শেখ মুজিব হত্যা ছিল একটি অসাংবিধানিক সামরিক অভ্যুত্থান কিন্তু জনগণ এতে উল্লাসিত হয়েছিল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ