![]() |
রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল বাঁকসমূহ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে কয়েকটি প্রধান ধাপে ভাগ করা যায়:
১. স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু যুগ (১৯৭১-১৯৭৫)
জন্ম: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্ম-নিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম।
প্রতিষ্ঠাতা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি।
সংবিধান: ১৯৭২ সালে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র— এই চারটি মূলনীতি নিয়ে সংবিধান প্রণীত হয়।
বিপর্যয়: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু হয়।
২. সামরিক শাসন ও বহু-দলীয় রাজনীতি (১৯৭৫-১৯৯০)
এই সময়কালে জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
সামরিক শাসকরা সংবিধানে পরিবর্তন আনেন এবং বহু-দলীয় রাজনীতি এবং ইসলামী মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনেন, যা দেশের মূল রাজনৈতিক ধারায় স্থায়ী পরিবর্তন আনে।
৩. সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন (১৯৯১-২০০৬)
১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই সময় থেকে দুটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়— আওয়ামী লীগ (Sheikh Hasina) এবং বিএনপি (Khaleda Zia)।
এই যুগটি তীব্র রাজনৈতিক বিভাজন, বয়কট, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কের জন্য পরিচিত।
বর্তমান রাজনৈতিক ধারা ও প্রধান পক্ষসমূহ
বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি মূলত দুটি প্রধান জোট বা দলের আধিপত্যে পরিচালিত:
| রাজনৈতিক শক্তি | প্রতীক | মূল আদর্শ ও পরিচিতি |
| বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | নৌকা | মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং উন্নয়ন অর্থনীতি। |
| বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) | ধানের শীষ | বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ইসলামী মূল্যবোধ এবং বহু-দলীয় গণতন্ত্রের স্লোগান। |
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এবং বিভিন্ন বামপন্থী দল।
আরও জানুন: বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং প্রধান বাধাগুলো কী কী?
বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য
ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতি: দলগুলোর প্রধানত ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের (বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং জিয়া পরিবার) উপর নির্ভরশীলতা প্রকট।
রাজনৈতিক বিভাজন: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র বৈরিতা ও আস্থার অভাব, যা রাজনৈতিক সমঝোতাকে কঠিন করে তুলেছে।
নির্বাচনী বিতর্ক: নির্বাচনকালীন পদ্ধতি ও নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে বিতর্ক ও সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতির একটি পুনরাবৃত্ত সমস্যা।
উন্নয়ন বনাম গণতন্ত্র: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিলেও, অনেক সমালোচক গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জসমূহ
বাংলাদেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে:
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ: নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
সহিংসতা হ্রাস: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা হ্রাস করে সংলাপ ও সমঝোতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা।
সুশাসন ও দুর্নীতি দমন: রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি হ্রাস করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা জনগণের আস্থা বাড়াবে।
যুবশক্তির অন্তর্ভুক্তি: বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গঠনমূলকভাবে যুক্ত করা এবং তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনীতি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালক, তেমনি অন্যদিকে তা অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও অচলাবস্থার উৎস। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

2 মন্তব্যসমূহ
Kb valo
উত্তরমুছুনGood
উত্তরমুছুন